নিজেকে এবং পৃথিবীকে বদলে ফেলার লক্ষ্যে বাংলাদেশি ইয়ুথ চেইঞ্জ মেকারদের এগিয়ে চলা

নিজেকে এবং পৃথিবীকে বদলে ফেলার লক্ষ্যে বাংলাদেশি ইয়ুথ চেইঞ্জ মেকারদের এগিয়ে চলা

এইচ এম জাকির ঃ

উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন -অনেকটা এমনই স্বপ্ন নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার এর পথচলা। আর এই পরিবর্তন ঘটাবে যুবসমাজ, সেই স্বপ্ন নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন তারা। কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের বিস্তার। চেঞ্জ মেকাররা কাজ করে যাচ্ছেন জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণে। “বদলে দিবো নিজেকে,বদলে দিবো  পৃথিবী” এই স্লোগান নিয়ে তাদের নিরন্তর এগিয়ে চলা ।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য তথা Sustainable Development Goal (SDG) হলো জাতিসংঘ ঘোষিত বেশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্য যার মাধ্যমে বিশ্বের কোন অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হবে না,মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং একমাত্র বাসযোগ্য গ্রহ পৃথিবীকে সুরক্ষা দেওয়া হবে।এই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ১৩টি।এর মধ্যে আছে দরিদ্র বিমোচন,খাদ্যের অভাব দূর করা,সবার জন্য সুস্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিশ্চিত করা,পরিবেশ সুরক্ষিত রাখা,জলবায়ু পরিবর্তন রোধ,প্রত্যেক প্রানীর জীবনকে আশংকামুক্ত রাখার মতো বিভিন্ন উন্নয়ন লক্ষ্য।
ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব সজীব খন্দকার তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, “আমরা কাজ করছি সমাজে চলমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে। আমরা জানি,যুবসমাজই পারে বর্তমান সময়কে সুন্দর এবং ভবিষ্যৎকে সুনিশ্চিত করতে। তরুণরা কেবল একটি দেশের নাগরিক নয়,বিশ্ব নাগরিক। তাই বিশ্বের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকলকে একতাবদ্ধ হতে হবে। আর এর জন্য যুবদের দক্ষ হতে হবে আর আমরা সেই দক্ষ ও দায়িত্বশীল যুবসমাজ সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছি এবং নিজেদের একটি যুববান্ধব সংগঠনে রূপান্তর করেছি”
২০১২ সালে কিছু উদ্যমী সেচ্ছাসেবী সমাজের মধ্যে এমন কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন যার মাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের সহযোগীতা করা যায়; যার মাধ্যমে অসহায় মানুষদের মৌলিক চাহিদা গুলো পূরণ করা যেন সম্ভব হয় এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার পুরণ করা যায়।সেই বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৫ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নিয়ে বরিশাল জেলায় তাদের কমিটি গঠন করে কার্যক্রম শুরু করেন এবং তাদের প্রথম প্রজেক্ট পথশিশুদের ঈদের পোষাক বিতরণ যার মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত অবহেলিত শিশু নতুন পোষাকে ঈদ উদযাপন করে।  
সমাজের প্রতি নিবেদিত প্রাণ এই সকল সেচ্ছাসেবীরা জনসহযোগীতা,আশ্রায়ণ,দূর্যোগে সহযোগীতা,জনসচেতনতার মতো উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নেয়।এর দ্বারা দেশের আনাচে-কানাচে অনেক সেচ্ছাসেবী তৈরি হয় যারা ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকারের সাথে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে।তাই ২০১৬ সালে গোটা বাংলাদেশে সেচ্ছাসেবী কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষে বিভিন্ন জেলায় তাদের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় ।এই কমিটির সদস্যরা তার নিজ জেলার সেচ্ছাসেবীদের নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
প্রতিষ্ঠাতা সজীব খন্দকার বলেন,“বাংলাদেশে তরুন এবং শিশুদের কথা গুলো বলার জন্য জায়গা খুবই কম এবং তাদের অধিকার বলার এবং শোনার জায়গটা খুবই কম । আইওয়াইসিএম এমন একটা প্লাটফর্ম যেখানে সব তরুন এবং শিশুরা সমান ভাবে অংশগ্রহণ করবে এবং আমি সকল তরুন এবং শিশুদের নিয়ে নতুন একটা বাংলাদেশ গড়তে চাই। সেই কথা চিন্তা করেই আমরা কাজ করছি। প্রাতিষ্ঠানিক সংগঠন গঠন করার আগে থেকেই আমি এবং আমার সদস্যরা সেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ করছি”
বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার বাংলাদেশের ১৩টি জেলায় আলাদা আলাদা ভাবে টিম গঠনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।জেলা টিমগুলো তাদের জেলায় দূর্যোগে সাহায্য,জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বৃক্ষায়ন ,দরিদ্রদের সহায়তা,অসহায়দের ঈদ উপহার বিতরণ ও পথশিশুদের জীবনের মানোন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়া বেশকয়েকটি প্রজেক্টও রয়েছে তাদের। ২০১৮সাল থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা টিম ৬০জন শিশুর পড়াশোনা সহ প্রাসঙ্গিক যাবতীয় খরচ বহন করছে এবং তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করে যাচ্ছে। করোনা এই মহামারি তে থেমে নেই সংগঠনটির কাজ করোনা প্রকোট বাড়ার সাথে সাথে ২০১৯ সাল থেকে করোনা মোকাবেলা তারণ্যের পদক্ষেপ নামে একটা ইভেন্ট এর মাধ্যম হতদরিদ্রের নিয়মিত খাবার বিতরন করছে সংগঠনটি ,২০২১ সালে পুরো জুলাই মাস জুড়ে তারা বাংলাদেশে ১৫ টি জেলায়  প্রায় বিশ হাজার মাস্ক বিতরন করছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার এর কার্যক্রম কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়।বিশ্বের সত্তরটিরও বেশি দেশে প্রায় পাঁচ শতাধিক সেচ্ছাসেবী তাদের রয়েছে যারা নিজ নিজ স্থান থেকে সমাজের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার এর বাংলাদেশস্থ ঢাকা জেলা কমিটি প্রতিনিধি আরও জানান, তারা খুব দ্রুত শিশু সুরক্ষা অলিম্পিয়াড আয়োজন করতে যাচ্ছে এবং এই বিষয়ে ইউনিসেফ বাংলাদেশ – এর কাছে প্রস্তাবনা প্রেরণ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার এর কো ফাউন্ডার লাবিবা সুলতানা জানান, “ বাংলাদেশ এর নারী সমাজের গুটি কয়েকজন ছাড়া সমাজে কাজ করার সুযোগ পান না।স্বনির্ভর হওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও হতে পারেন না বিভিন্ন কুসংস্কার এর কারণে যারা গ্রাম বা মফস্বল এ থাকেন।আমি এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই যেখানে সকলের যোগ্যতা দেখা হবে,সমাজের কাজে সকলেই অংশ নিতে পারবে,লিঙ্গ বৈষম্য থাকবে না আর নারীরা চিরাচরিত কুসংস্কার থেকে বেড়িয়ে এসে একটি সুস্থ জীবন গ্রহণ করবে””
উল্লেখ্য যে, ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার এর উপদেষ্টা হিসাবে যুক্ত আছেন এডিসি,ডিএমপি জনাব ইফতেখায়রুল ইসলাম, বরিশাল জেলার সাবেক জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকতা জনাব পঙ্কজ রায় চৌধুরী; রোচাস রেস্টুরেন্ট শ্যামলী এর ডিরেক্টর তাহমিনা পারভীন; মাছরাঙা টেলিভিশনের বগুড়া প্রতিনিধি খোরশেদ আলম; ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন, উত্তরবঙ্গ এর  ব্যুরো চীফ হাসিবুর রহমান বিলু , বগুড়ার সদর স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা, ডা. সামির হোসেন মিশু ; বগুড়া-UNFPA এর জেলা অফিসার মাসুদা ইসলাম;আল -কাদেরিয়া লিমিটেড এর চেয়ারম্যান মো:ফিরোজ আলম সুমন, এবং খুলনা জেলার সমাজকর্মী মেরিনা জুথী।
সেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকারের যথেষ্ট সুনামও রয়েছে।তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে এমন সম্মাননাও অর্জন করছে। আইওয়াইসিএম বরিশাল জেলা ইউনিট সদস্য রাবেয়া বশরী মিনা মিডিয়া এওয়ার্ড অনুষ্ঠানে সেরা শিশু সাংবাদিক নির্বাচিত হন। সেই বছরই আইওয়াইসিএম ফাউন্ডার সজীব খন্দকার জুনায়েদ Planned Parenthood Federation South Asia Regional Office (IPPF SARO) এর আয়োজনে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি) এর সহযোগিতায় ব্যাংককে পাঁচ(৫) দিনের  ইয়ুথ কনসালটেশনে অংশগ্রহণ করেন।এছাড়া সার্ক তরুন সম্মেলনে আইওয়াইসিএম কে উপস্থাপন করেন তিনি।২০১৮সালে পোলেন্ড এবং ২০১৯সালে স্পেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে তরুনদের পক্ষ হয়ে আইওয়াইসিএম প্রতিনিধিত্ব করেন। সম্প্রতি সংগঠনটি Bangladesh Digital Social Innovation Award গ্রহণ করে।